গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী লোকখাদ্য- পিঠা অন্যতম
গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী লোকখাদ্য- পিঠা অন্যতম
গাজীপরের লোকজ খাবারের মধ্যে পিঠা উল্লেখযোগ্য। এখানকার প্রতিটি উপজেলার গ্রামে গ্রামে এখনো পিঠাপুলির প্রচলন রয়েছে। কালীগঞ্জ ও কাপাসিয়া অঞ্চলে কারুকার্যময় পিঠা বেশি তৈরি হয়। গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী পিঠার মধ্যে রয়েছে কাঠালের পিঠা, পুলি পিঠা (তিলপুলি, মুগপুলি, রাঙ্গাপুলি, ক্ষীরপুলি, ভাপাপুলি, ক্ষীরসা পুলি, চিড়ের পুলি) ফুল পিঠা, দুধ চিতই, পাটিসাপটা, তেলের পিঠা, গুলগুলা, ঝাল পিঠা, ম্যারা পিঠা, তালের পিঠা, কলার পিঠা, কলার থোড়ের পিঠা, ধুপি পিঠা, রসের পিঠা, ফুলকুচি, লবঙ্গ পিঠা, সেওই পিঠা, ক্ষীরডুবি, শিরিষ পিঠা, খাস্তা পিঠা, ঝুড়ি পিঠা, ঝিকমিক পাতা পিঠা প্রভৃতি।
[caption id="attachment_5871" align="alignnone" width="868"]

এগুলার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর পিঠা হলো ফুলপিঠা বা নকশি পিঠা। এই নকশি পিঠার বিভিন্ন মোটিফ রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: শাপলা বাহার, জবা বাহার, গোলাপ বাহার, পাতা বাহার, গেন্দা বাহার, পদ্ম বাহার, কল্কে বাহার, কাজল লতা, লতা বাহার, ঝিলিমিলি, জোড়া ময়ূর, মেঘডম্বুর, কন্যামুখ, জামাইমুখ, মোরগঝুটি, সাজনী বাহার প্রভৃতি । পিঠা তৈরির উপকরণ মূলত চালের গুড়া, ময়দা, চিনি, গুড়, দুধ, নারকেল, তেল, ঘি ইত্যাদি।
গাজীপুরের নকশি পিঠা অন্যান্য খাবারের মধ্যে আছে ছানার তৈরি বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি, রসগোল্লা, চমচম, রসমালাই, প্রাণহারা, ভাওয়ালের বিখ্যাত জিলাপি ও আমৃতি, সন্দেশ, পায়েস, ফিরনি, চিড়া, মুড়ি, খই, মোয়া, মুড়কি, গজা, লাডু প্রভৃতি । কালিয়াকৈরের ঘোষ সম্প্রদায়ের তৈরি প্রাণহারা এখানকার সবচেয়ে সুস্বাদু মিষ্টি । ঐতিহ্যবাহী ফুলপিঠা তৈরির বিবরণ গাজীপুরের পিঠার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সুন্দর হলো ফুলপিঠা। এটা পাতা, ফুল বা যে কোন আকৃতির হতে পারে ।
পিঠাটির প্রস্তুত প্ৰণালী নিচে বর্ণিত হলঃ
উপকরণঃ চালের গুড়ো, লবন, গুড়/চিনি, তেল। এছাড়া পিঠায় নকশা করার ব্যবহার করেন। জন্য খেজুর কাটা বা অন্য কোনো সূচালো জিনিস। কেউ কেউ বিভিন্ন ডিজাইনের ছাঁচও ব্যবহার করেন।
প্রণালীঃ প্রথমে পরিমাণ মত চালের গুড়া দিয়ে রুটির আটার মত সেদ্ধ করে আটা ভালভাবে ছেনে নিতে হবে। আটা করার সময় পানিতে একটু লবন মেশাতে হবে। তারপর একটু ভারি করে রুটি বেলতে হবে। এবার তা থেকে গোল, লম্বা বা পাতার মতো বিভিন্ন আকৃতি বানিয়ে কেটে নিয়ে ভিতরে কাটা, ছুরির ডগা বা যে কোন সূচালো জিনিস দিয়ে কেটে কেটে নকশা করতে হবে । চারপাশ যেন মসৃনভাবে কাটা হয়। তারপর পিঠাগুলো কিছুটা শুকিয়ে নিয়ে তেলে ভাজতে হবে যেন বাদামী রং হয়। না শুকিয়েও ভাজা যায়। তবে শুকালে মচমচে ভাবটা থাকে। অন্য একটি পাত্রে গুড় বা চিনির শিরা করে তাতে পিঠাগুলো ডুবিয়ে তুলতে হবে। এবার পিঠা খাওয়ার উপযোগী হয়ে গেল। ফুলপিঠার একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হল পিঠাগুলো বানিয়ে হালকা ভেজে বেশকিছুদিন রাখা যায় এবং প্রয়োজন মত তেলে ভেজে শিরায় ডুবিয়ে খাওয়া যায়।
তথ্যসূত্রঃ লাভলী বেগম, বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা (গাজীপুর) ১৬৩-১৬৪ পৃষ্ঠা
No comments