প্রয়োজনে বাসায় গিয়ে হত্যা করব রিমিকে- আলমের হুমকি
বঙ্গতাজ কন্যা সিমিন হোসেন রিমি বলেছেন,
বঙ্গুবন্ধুকে হত্যার পর রশিদ, ফারুক দম্ভভাবে যেমন বলেছে আমরা হত্যা করেছি। তেমনি কাপাসিয়ায় দম্ভভাবে বলা হচ্ছে আমি হত্যা করব। দরকার লাগলে বাসায় গিয়ে। শুধু হত্যা না আরও কি করা যায় সে (আলম) জানে। এটার থেকে বড় কথা কিছু হতে পারে না।
শনিবার (২ জুন) গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সাংসদ সিমিন হোসেন রিমি কৃষক লীগ উপদেষ্টা আলম আহমদের দেওয়া হুমকির প্রতিবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ হল মূল সংগঠন। মূল সংগঠনের বাইরে সহযোগী সংগঠন যদি কোন অবৈধ কার্যক্রম, অনৈতিক কাজ করে সেটার বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা ও আইনগত ব্যবস্থা নিব। এছাড়া কোন ভাবেই তাকে থামানো যাবে না।

রিমি বলেন,
কথায় বলে গর্ত করে অন্যকে ফাঁদে ফেলতে চাইলে নিজেই ফাঁদে পড়তে হয়। তেমনি কৃষকলীগ ফাঁদে ফেলতে গিয়ে নিজেরাই গর্তে পড়ে গেছে। এরকম প্রকাশ্যে খুনের হুমকি দিয়ে নিজের ফাঁদে নিজে আটকা পড়ে গেছে। আলম বলেছে কতল করব, খুন করব। কতল শব্দ জামায়াতে ইসলাম ব্যবহার করে। তারপর বলেছে ভিডিও পাঠাতে সে আমাকে খুন করবে। এত বড় স্পর্ধা কোথা থেকে পায়?
প্রশ্ন?
এটা আমার প্রশ্ন, এই স্পর্ধাগুলো কারা দেয়। সেগুলো খুজে বের করতে হবে। মোতাহার মোল্লা, রশিদ সরকার, বাবলু, আইয়ুব এদের কাউকে আমাদের যে চিন্তা এটার বাইরে রাখতে পারব না। এদের ইন্ধনে সব হচ্ছে।বঙ্গতাজ কন্যা নিজের ফুফাতো ভাই আলম আহমদ প্রসঙ্গে বলেন, কোন দিন শুনিনি কৃষক লীগের উপদেষ্টা আছে। শান-শওকত করে, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে কৃষক লীগ সভাপতির সম্মতিতে উপদেষ্টা পদ তৈরী করা হয়েছে।
অভিযোগ-
রিমি অভিযোগ করে বলেন, গত দুই মাস আগে মোতাহার মোল্লা ফোন দিয়ে আমার সাথে অশ্লীল ভাষায় কথা বলেছে। তারপর ফোন কেটে তাৎক্ষণিক কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাকে ফোন করে বিষয়টি জানাই। তখন উত্তরে রেজা বলেছেন মোতাহার মোল্লাকে নিয়ে পারতেছিনা, তাকে নিয়ে আর সম্ভব না আপনি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলেন। তখন আমি চিন্তা করেছি আরেকটু দেখি। পরে যেখানে বলার আমি সেখানে বলব।কাপাসিয়ার এই সাংসদ বলেন, কিছুদিন আগে ত্রিশালে নজরুল জয়ন্তী অনুষ্ঠানে গিয়েছি। সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, এমপিসহ এলাকার অনেক লোক আমাকে বলেছে মোতাহার মোল্লা টাকা ছাড়া কমিটি করে না। লজ্জা লাগে আমার এসব শুনলে।
এছাড়া যশোর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমাকে ফোন করে নেতারা অভিযোগ করেন। তাদের ফোন করার উদ্দেশ্য একটাই যে, আমার কাপাসিয়ার লোক। বইনরে (বোন) দিয়ে টাকা কম নেওয়া যায় কি-না। অথবা টাকা ছাড়া কোন পদ পাওয়া যায় কি-না। এটা আমাদের জন্য খুব সুখের? উপস্থিত সকলের সামনে তিনি এমন প্রশ্ন রাখলে লজ্জার লজ্জার বলেন সবাই।তিনি আরও অভিযোগ করেন, মোতাহার মোল্লা আমার অফিসে ফোন করে অশ্লীল ভাষায় কথা বলেছে। এর রেকর্ড আমার কাছে আছে। আপনারা একটা বিষয় মনে রাখবেন, সোহেলের নামে মিথ্যা জিডি করে এই আলম সরকারের সাথে যারা আছে মোতাহার মোল্লা থেকে শুরু করে সবাই কাপাসিয়ায় ছড়িয়েছে।
আলম বলছেন-
আলম বলছে, আপনাদের প্রিয় নেতা সোহেলকে বের করে দেওয়া হয়েছে কাপাসিয়া থেকে। সোহেলকে ব্যবহার করার জন্য আপনাদের প্রিয় নেতা না বলে আমার বলে ফেলেছিল। তখন তাড়াতাড়ি আমার শব্দটা বাদ দিয়েছে। এটা খেয়াল করবেন এই ভিডিওতে আছে। তিনি উপস্থিতদের বলেন, সোহেলকে যদি বের করা হয়ে থাকে, আপনারা একটু খোঁজ নেন। সোহেলের নম্বর তো আছে সবার কাছে। সোহেল ঢাকায় থাকলে কোথায় থাকে? বর্তমানে সোহেল ঢাকায় আছে, কোথায় আছে? কোথায় থাকে? আমার সাথে থাকে। কোন যাদু-টোনা করে তাকে আমার সাথে রেখে দিয়েছি? এক নারী তখন বলেন রক্তের সম্পর্ক এটা থাকবেই। তখন রিমি বলেন, না কোন রক্ত নয়। রক্তকে আমি বিশ্বাস করি না।
কারণ রক্তের লোকও খারাপ ব্যবহার করে। রক্তের লোক যেকোন কিছু করতে পারে। পৃথিবীতে যত খুনা-খুনিসহ যা কিছু হয় আপন আত্মীয়রাই করে। বাইরের লোকরা যত আপন হয়, নিজেদের লোকরাও তত হয় না। এজন্য আত্মার সাথে যার সম্পর্ক সে-ই হল আপন। কারণ এই রক্তের সম্পর্ক বলে আমরা সম্পর্ক সৃষ্টি করি। কিন্তু এই আত্মীয় আমি মানি না। আমাকে তো বলেছে আত্মীয়র কথা, এই আত্মীয় আমি মানি না। তিনি বলেন, মোতাহার মোল্লা আমার অফিসের লোককে ফোন করে আমার সম্পর্কে খারাপ কথা বলে। তখন আবার আমার স্বামী হয়ে যায় ফেরেস্তা, ওনার মত ভাল লোক হয় না। আমাকে যে গালিটা দিয়েছে তা আমি দিলাম না। আমি নাকি একদম ধ্বংস করে দিলাম। কাপাসিয়া ধ্বংস করলাম, আর তার জীবনও নাকি ধ্বংস করে দিলাম। এই সমস্ত কথা মোতাহার মোল্লা আমার অফিসে ফোন করে বলে। আমার কাছে এসব কথার সব টেপ (রেকর্ড) আছে।
এই মোতাহার মোল্লা, আপনারা জানেন না আমি তাকে কত রকম করে বুঝিয়েছি। যে বাবলু জহুরা তাজউদ্দীনের হাত থেকে মাইক ছিনিয়ে নিয়েছে, যে বাবলু সোহেল তাজ থাকার সময় একদিনও কাপাসিয়ায় থাকেনি তাকেই সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছে মোতাহার মোল্লা। এই বাবলু বলেছিল সোহেল ছাড়া নৌকা চাই। কারা আছে এই কৃষক লীগের সাথে? যারা কোনসময় তাজউদ্দীন পরিবারকে চায় না।তারা বলে কাপাসিয়া থেকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক মুক্ত করবে। প্রকৃত আওয়ামী লীগ ঠিক করবে। কৃষক লীগকে কি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কাপাসিয়ার আওয়ামী লীগ ঠিক করার?
বাংলাদেশের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ উপজেলা কাপাসিয়া। এখানে চাঁদাবাজি নাই, আমি এমপি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে বলছি এখানে যে শত শত কোটি টাকা সরকারের উন্নয়ন কাজ হয়েছে, আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে করে দিয়েছি। বলতে পারবে না কে ঠিকাদার। কারণ আমার প্রয়োজন হল সরকারের কাজ বাস্তবায়ন করা। আমার প্রয়োজন হল কাজ নিয়ে আসা। ওনাদের কাজ দুর্নীতি করা, টাকা মারা। আমি থাকাতে সোহেল থাকাতে তারা এসব পারেনি। তাদের কারণে সোহেল টিকতে পারেনি। এরা তাজউদ্দীন আহমদকে জ্বালাইছে, বিবেধ সৃষ্টি করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। তাজউদ্দীন আহমদের মত মানুষকে হত্যা করেছে, ওরা সোহেলকে রাজনীতিতে টিকতে দেয়নি।
সোহেলের মত একজন ভাল মানুষের রাজনীতিতে অনেক কিছু দেওয়ার ছিল। আলম বলেছে দরকার হলে জীবন দিবে তবুও আমাকে কাপাসিয়া আসতে দিবে না। এক নম্বর কথা সে আসতে দেওয়ার কে? আমার সাথে যা যোগাযোগ প্রধানমন্ত্রীর সাথে। এখানে আমাদের এই দুজনের ভেতরে আর কোন ব্যক্তির উপস্থিতি নাই।রিমি বলেন, আমি কাপাসিয়ার নমিনেশন নিয়ে চিন্তা করি না, নমিনেশনের জন্য কাজ করি না। আমি কাপাসিয়ায় যে কাজ করেছি তা ঢাকায় বসে থাকলেও কোন অসুবিধা ছিল না। আমার উদ্দেশ্য এমপি হওয়া না, লুটতরাজ করা না, আমি গর্ব নিয়ে বলি কাপাসিয়া সব থেকে ভাল একটা এলাকা। এই কাপাসিয়ার শান্তি বিনষ্ট করার জন্য মোতাহার মোল্লার মত লোকরা আছে।
যারা সবসময় ভাল লোককে সামনে আসতে দেয় না। ভাল লোককে রাজনীতিতে আসতে দেয় না। এরকম লোকদের জন্য ভাল লোকরা রাজনীতিতে আসতে আগ্রহ হারায়। এইসব লোককে চিহ্নিত করে আমাদের সামনের দিকে আগাতে হবে। কারণ এসব লোক দিয়ে চলবে না। যে লোক পয়সার কাছে বিক্রি হয়, পয়সা দিয়ে রাজনীতি এখানে পাবে না। কারণ আমরা তাজউদ্দীন আহমদের আদর্শ বিশ্বাস করি।
ওনার (তাজউদ্দীন আহমদ) কথা ছিল ‘আমি আমার নিজের গতর খাইটা মানুষের জন্য কাজ করব। আমি আমার ভালবাসা দিয়ে মানুষের জন্য কাজ করব। আমি আমার নিজের কাছে প্রমাণ করতে চাই যে, টাকার বিনিময় ছাড়া কোনদিন ভোট পেয়ে জেতা যায় কি-না। তাজউদ্দীন আহমদ সেই পরিচয় তার তরুণ বয়সে ৫৪ সালে দিয়েছে, ৭০ সালে দিয়েছে, ৭৩ সালে দিয়েছে। ওনি যদি বেঁচে থাকতেন আমার ধারণা একইভাবে মানুষ তাকে গ্রহণ করত।
রিমি বলেন, আপনাদের বলতে চাই কোন কিছুতে বিভ্রান্ত হবেন না।
নমিনেশন কোন বিষয় না। রাজনীতি হল আসল। অন্যায়কে দিয়ে কোন দিন অন্যায় দূর করা যায় না। অন্যায়কে নীতি ন্যয্যতা দিয়ে দূর করতে হয়। সে ব্যবস্থাটা কাপাসিয়ায় করতে চাই। কারণ কিছু কিছু ষড়যন্ত্র করে ষড়যন্ত্রকারী হওয়া যায়, কোন দিন ভালো সাজা যায় না। কাক কখনও ময়ূর হতে পারে না। আমাদের মুখে মুখে সত্য চাই খারাপ লোক তাড়াতে চাই বললেই হবে না। এটা করে দেখাতে হবে।
বাংলাদেশের আর কোথায় কি হচ্ছে আমি জানতে চাইনা। কাপাসিয়া থেকে এই ধরণের দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদক মুক্ত করে যারা প্রকৃত বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার আদর্শ বাস্তবায়ন করতে চায় যারা সত্যিকার অর্থে তাজউদ্দীনকে ভালবাসে আমরা সেই লোকদের নিয়ে রাজনীতি করতে চাই।সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রধান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
No comments